নবাব সিরাজউদ্দৌলা কেন হত্যা করেছিলেন তৎকালীন ভারতবর্ষের সবচেয়ে সুন্দরী মহিলাকে?

নবাব সিরাজউদ্দৌলা তখনও নবাব হননি। তিনি যুবরাজ। তারুণ্যের শোভায় তিনি ভরপুর। এমন সময় এক নারীর রূপের বর্ণনা কথা সিরাজের কানে গেল। সিরাজ মনঃস্থির করলেন, এই নারীকে তিনি মুর্শিদাবাদে নিয়ে আসবেন। বলা যেতে পারে সেই নারীর বর্ণনা শুনে তরুন সিরাজ প্রেমে পড়লেন। 

 


দিল্লীর দরবারের নাচ মহলে বেজে উঠেছিল সেতার, সারেঙ্গীর মিশ্রণ সুর। ঘুঙুরের তালে চঞ্চল হয়েছিল বাদশাহ-র মন। এমন সময় এক চিঠি গিয়ে পৌছালো মুর্শিদাবাদ থেকে। বাদশাহ একটু বিচলিত হয়ে পড়লেন। চিন্তার ছাপ স্পষ্ট হয়ে উঠল মুখে। কিন্তু কেন? কি এমন লেখা ছিল তাতে? 


তা জানব আজকের ভিডিওতে। কিন্তু মূল পর্বে যাওয়ার আগে, আপনি যদি এই চ্যানেলে নতুন হোন আর ইতিহাসের নানা অজানা কাহিনী জানতে চান, তাহলে subscribe করুন এই চ্যানেলটিকে।


মুর্শিদাবাদের ইতিহাস ঘাটলে যেমন উঠে আসে বিশ্বাসঘাতকতার কাহিনী তেমনি মুর্শিদাবাদ জুড়ে আছে নানান বৈচিত্র্যপূর্ণ মৃত্যু কাহিনী। আলিবর্দি খাঁ- থেকে নবাব সিরাজউদ্দৌলা প্রত্যেকের রাজত্বকালেই আছে কিছু ভিন্ন ভিন্ন মৃত্যু। সেই মৃত্যুর আড়ালে আছে লালসা, ভালোবাসা অথবা বিশ্বাসঘাতকতা নয়ত কঠোর শাসন। 


নবাব সিরাজউদ্দৌলা তখনও নবাব হননি। তিনি যুবরাজ। তারুণ্যের শোভায় তিনি ভরপুর। এমন সময় এক নারীর রূপের বর্ণনা কথা সিরাজের কানে গেল। সিরাজ মনঃস্থির করলেন, এই নারীকে তিনি মুর্শিদাবাদে নিয়ে আসবেন। বলা যেতে পারে সেই নারীর বর্ণনা শুনে তরুন সিরাজ প্রেমে পড়লেন। 


কিন্তু কে এই নারী ? ইনি হলেন ফৌজি ফয়জান ওরফে ফৌজি বাঈ। লখনউ-এর এক বারাঙ্গনা কন্যা। এবং তৎকালীন দিল্লীর দরবারে বাদশাহ-র খাস নর্তকী। তার সৌন্দর্যের আলোকছটায় আলোকিত থাকতো গোটা দিল্লীর দরবার। তৎকালীন সময় এমন একটা প্রবাদ প্রচলিত ছিল যে, সমগ্র ভারতবর্ষে ফৌজির মত সুন্দর আর কেউ ছিলনা। ফৌজি বাঈ-এর ত্বক এতটাই উজ্জ্বলবর্ণ ছিল যে, পান খেলে তার গলা লাল হয়ে যেত। লোকমত অনুসারে, তার ওজন ছিল মাত্র ২২ সের। অর্থাৎ প্রায় ২০কেজি ৫২৮ গ্রাম মতন।


যেহেতু ফৌজি বাঈ দিল্লীর বাদশাহর নর্তকী তাই তাকে মুর্শিদাবাদ আনতে হলে দিল্লীর দরবারে অনুমতি নিয়ে আনতে হবে। সিরাজ বাদশাহর কাছে তাঁর আর্জি পেশ করলেন। কিন্তু বাদশাহ এই জহরত ছাড়তে চাইলেন না। আবার অন্যদিকে তিনি জানতেন নবাব আলীবর্দির নাতি সিরাজ। বাংলার পরবর্তী নবাব সে। প্রত্যেক বছর আলীবর্দি তাঁকে খাজনা সহ উপঢৌকনে মুড়িয়ে দেন তাই অনেক ভেবে বাদশাহ চিঠির উত্তর দিলেন। তিনি লিখলেন, “ফৌজি বাঈ কে মুর্শিদাবাদ নিয়ে যেতে হলে তাকে এক লক্ষ স্বর্ণমুদ্রা দিতে হবে।” বাদশাহ ভেবেছিলেন সিরাজ এখন এই পরিমাণ মুদ্রা জোগাড় করতে পারবেনা।  আর ফৌজি কেও হারাতে হবেনা।


অন্যদিকে এই চিঠি পাওয়ার পর সিরাজ একটু বিচলিত হয়ে পড়লেন। প্রায় তিনদিন প্রাসাদে রইলেন। এক মুহূর্তর জন্যেও বেড়ালেন না বাইরে। নবাব আলীবর্দী খাঁ এই সংবাদ পাওয়ার পরই সিরাজকে ডেকে পাঠালেন। শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে সিরাজ গেলেন না। পরদিন নবাব নিজে এলেন মহলে সিরাজের সাথে দেখা করতে। সিরাজ তাঁর কাছে আবদার করলেন এক লক্ষ স্বর্ণমুদ্রা দেওয়ার জন্য। নবাব একটু অবাক হলেন, কিন্তু কোন প্রশ্ন করলেন না। এবং পরে তিনি তা সিরাজকে দিলেন। 




সিরাজ সেই স্বর্ণমুদ্রা পাঠিয়ে দিলেন দিল্লীর দরবারে। বাদশাহ একটু অবাক হলেন। কিন্তু তিনি আর কিছু বলতে পারলেন না। দিল্লীর দরবার থেকে ফৌজি বাই এলেন হিরাঝিল প্রাসাদে। তাঁর রূপের ছটায় আলোকিত হয়ে উঠল প্রাসাদের কোণা কোণা। যুবরাজ সিরাজ চেয়েছিলেন ফৌজি ফয়জানকে একান্তে পেতে। কিন্তু যে যাকে চায়, সবসময় সে কি তাকে পায়? যুবরাজ সিরাজ ও পেলেন না ফৌজি ফয়জানকে। কিন্তু কেন? 


ফৌজি আকৃষ্ট হয়েছিলেন অন্য এক পুরুষের প্রতি। সৈয়দ মহম্মদ। সিরাজের ভগ্নিপতি। ধীরে ধীরে তাঁর প্রতি আসক্ত হতে থাকলেন ফৌজি। এবং মহম্মদ খাঁ ও তাঁর প্রেমে আকৃষ্ট হয়ে গেলেন। কিছু দিন ধরে তাদের প্রেমালাপ চলতে লাগলো গোপনে। মহলের অন্দরে চাপা গুঞ্জনও শুরু হল তাদের নিয়ে। সেই খবর পৌছাল সিরাজের কানেও। তিনি প্রথমে বিশ্বাস করেননি। কিন্তু একদিন তিনি তাঁদের দুজনকে দেখে ফেলেন ঘনিষ্ঠ মুহূর্তে। 


ভয়ে সৈয়দ মুহম্মদ মুর্শিদাবাদ ছেড়ে পালিয়ে গেলেন। ফৌজি বাইয়ের ওপর ক্রোধে তিনি তাঁকে ‘কসবি’ বলে ভর্ৎসনা করলেন।  কি ভাবছেন ফৌজি বাই এতে ভীষণ রকম ভয় পেয়েছিলেন? বা অপমানিত হয়েছিলেন? আদপেও না। তিনি হেসে বলেছিলেন,  “এটা আমাদের পেশা। এটা আমাদের ব্যবসা। এই কথাটা আপনি আপনার আম্মাজান কে বললে তিনি হয়ত অপমানিত বোধ করতে পারেন। কিন্তু আমি না”। 


ক্রোধে উন্মত্ত সিরাজ আদেশ দিলেন ফৈজী বাঈকে একটি ঘরে বন্দি করে তার চারপাশে দেওয়াল তুলে দিতে। যথারীতি রাজমিস্ত্রী এল। বন্ধ ঘরে দরজার বাইরে গেঁথে দেওয়া হল দেওয়াল। 


একসময় যার রুপের ছটায় আলোকিত হয়ে উঠেছিল হিরাঝিল প্রাসাদ সেই আলোর উৎস ধীরে ধীরে নিভে যেতে থাকল বদ্ধ ঘরে। প্রায় তিনমাস পর দেওয়াল ভেঙ্গে বার করা হয়েছিল ফৈজী ফয়জানের মৃতদেহ। 


ফৈজী বাঈকে সিরাজ ভালবেসে এনেছিলেন দিল্লির বাদশার কাছ থেকে। তাই হয়ত ফৈজীর বিশ্বাসঘাতকতা সিরাজ কিছুতেই মেনে নিতে পারেননি। এবং তাকে হত্যা করেছিলেন। এই ঘটনার পর রমণীজাতির উপর সিরাজের অত্যন্ত ঘৃণা তৈরি হয় । কিন্তু ধীরে ধীরে তার এই মানসিকতার সম্পুর্ন বদলে ফেলেছিলেন  লুৎফুন্নিসা। সে গল্প বলব অন্য এক পর্বে। 


যে যাকে চায়, সবসময় সে কি তাকে পায়? সিরাজ ও পায়নি। কিন্তু কেন? 


এই ঘটনার পর রমণীজাতির উপর সিরাজের অত্যন্ত ঘৃণা তৈরি হয় ।


Comments

Popular posts from this blog

হারানো এক জয় সেবাস্টিয়ান আর কলকাতার গপ্পো ❤️

জিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার ১৭২ বছর

৩ মাস ধরে জ্বলেছিল এই পৃথিবী সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯তলা গ্রন্থাগার!